
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা।
পৌরসভা নির্বাচনের দিন যতোটা ঘনিয়ে আসছে, ততোটাই বাড়ছে উত্তাপ। ৬ মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ৫৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর গণসংযোগ, মাইকিং, পোস্টার ব্যানার, লিফলেট, মিছিল-মিটিংয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরশহর। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পেশাদার শিল্পীদের কন্ঠে রেকর্ড করা গানের তালে তালে প্রার্থীদের গুনকীর্তন করে চলছে প্রচারণা। কেউ কেউ স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ঘোষণা করছেন ইশতেহার।
অনেকেই আবার বিগত দিনে দায়িত্বশীলদের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে ভোটারদেরকে ভোট প্রদানে সচেতন থাকার অনুরোধও জানাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে তরুণ প্রার্থীদের সংখ্যাই বেশি। প্রচার-প্রচারণায় প্রবীণদের চাইতে নবীনরা অনেক এগিয়ে রয়েছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি রায়পুর পৌরসভার ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২৩ হাজার ৬শ’ ৩১ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ৯শ’ ৯০জন ও মহিলা ভোটার ১১ হাজার ৬শ’ ৪১ জন। এখানে ৯টি ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৩টি। প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মেয়র পদে ৬, সাধারণ পদে ৫০ ও সংরক্ষিত নারী পদে ৭ জন।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট (নৌকা) পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম জিলানী (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক অধ্যাপক মনির আহম্মেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর পৌর আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত নেতা মোঃ নাছির উদ্দিন সগির (পানির জগ)স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর শ্রমিকলীগ নেতা মাসুদ উদ্দিন (নারিকেল গাছ) ও ইসলামী শাসন তন্ত্র আন্দোলনের মাওলানা আব্দুল খালেক (হাতপাখা)।
আওয়ামীলীগ সূত্র জানায়, নৌকাকে বিজয়ী করতে দ্বিধা-দ্বন্ধ ভুলে এক প্লাটফর্মে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয়, স্থানীয় ও জেলা কমিটির নেতাদের সরব উপস্থিতিতে নৌকার প্রচারণা চলছে ঢাকঢোল পিটিয়ে। তরুণ প্রার্থীকে পেয়ে কর্মী, সমর্থক ও ভোটাররাও উচ্ছসিত। নান্দনিক পৌরসভা বিনির্মাণে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ব্যর্থতাকে তুলে ধরে আগামীতে নৌকার মেয়র নির্বাচিত হলে জনদূর্ভোগ লাঘবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
নৌকার প্রার্থী মোঃ গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, আওয়ামীলীগ ও নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং সরকারের কাছ থেকে বরাদ্ধ আনতে এখানে নৌকার বিকল্প নেই। আমি নেতা নই, জনগণের সেবক হতে চাই। আমি, আমার পরিবার ও দল জনগণের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। ভোটারদের স্বত:স্ফুর্ত সাড়াই বলে দেয় আগামীতে আমরা নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে ইনশাআল্লাহ জয়লাভ করবো।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানায়, এখানে বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে অনেকটা ঢিমেতালে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক শোডাউন করে তারা কোনো ওয়ার্ডে কর্মী সমাবেশ করতে পারেননি। তবে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত দিনের তুলনায় এখানে এবার বিএনপির মেয়র প্রার্থীর দলীয় গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা কোণঠাসা অবস্থয় রয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমে সময় না দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ততার কারণে গত কয়েক বছর ধরে তিনি দলীয় কার্যক্রমে অনেকটা অনুপস্থিত। পৌর কমিটিতেও রয়েছে কোন্দল। সহযোগী সংগঠনের একাংশও তার বিরোধীতায় রয়েছে। একারণে তিনি এবার দলীয়ভাবে একচ্ছত্র সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিগত দিনের প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যানে এখানে তাদের ভোটের দূর্গ হিসেবে দাবি করলেও সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে তাদের সে ফল এখন সুদূর পরাহত।
ধানের শীষের প্রার্থী এবিএম জিলানী বলেন, নেতাকর্মীদের সাথে কখনোই আমার দূরত্ব ছিলনা। সাংগঠনিকভাবেও বিএনপি ও সহযোগি সংগঠন এখানে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। রায়পুর উপজেলায় ভোটের হিসেবে এটি বিএনপির দূর্ঘ বলে বিগত দিনেও প্রমাণিত হয়েছে এবং আগামীতেও ইনশাআল্লাহ হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।
জামায়াতের সূত্র জানায়, পৌর নাগরিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করছেন জামায়াতের সমর্থিত প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মনির আহম্মদ। সরকারি চাকুরীর কারণে তিনি সরাসরি দলটির রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও একচ্ছত্রভাবে তিনি দলটির নেতাকর্মীদের সমর্থন পেয়েছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে নারী ও পুরুষ টীম তাদের প্রার্থীর জন্য ভোর থেকে গভীর রাত অবধি গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। প্রচার-প্রচারণায় তারা বিএনপিকেও ছাড়িয়েছে।
মোবাইল প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক মনির আহম্মদ বলেন, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হলে ইনশাআল্লাহ মোবাইল প্রতীক মেয়র জয়লাভ করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদিকে নির্বাচনে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখানো, কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও হুমকি দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা। রয়েছে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা ও প্রচারে বাধাসহ সাধারণ অভিযোগও। রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে এ ধরনের লিখিত অভিযোগ করেছেন ধানের শীষ ও মোবাইল প্রতীকের দুই মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী।
রায়পুর পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার দীপক বিশ্বাস বলেন, ভোট গ্রহণে ইতোমধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রচারণা নিয়ে কিছু কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। সব অভিযোগই তদন্ত করতে ম্যাজিস্ট্রেটদের ক